জসিম উদ্দিন রাজা : বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নৈতিকতার মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যম ব্যবসা নয়, এটা পেশা
। কিন্তু আজ দেশে এটা ব্যবসা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক।
বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শওকত আলী খানের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের নৈতিকতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন রুজভেল্ট। তিনি পোলিও রোগী ছিলেন। তিনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারতেন না। তিনি যখন হাঁটতেন তখন তার সেই ছবি কোনো গণমাধ্যম প্রকাশ বা প্রচার করেনি। শুধু তিনি যখন বসাবস্থায় বক্তব্য দিতেন, সেই ছবি প্রচার করা হতো। তারা এটা করেছে নৈতিকতার প্রশ্নে।
তিনি আরো বলেন, একইভাবে ব্রিটেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মি. ব্রাউন। তার কিছু দুর্বলতা ছিল। তিনি বেশি পানীয় পান করতেন। একদিন প্রধানমন্ত্রী বের হচ্ছেন, আর মি. ব্রাউন প্রবেশ করছেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দেখে গাড়ি থেকে নামতে যেয়ে পড়ে যান। প্রধানমন্ত্রী তাকে টেনে তোলেন। তখনকার সংবাদ কর্মীরা এই ছবি তোলেন। কিন্তু তা প্রকাশ করেনি। তিন দিন পর টাইমস ম্যাগাজিনে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়। তারা সেখানে বলেন, এই ছবি থাকার পরও নৈতিক প্রশ্নে তারা তা প্রকাশ করেননি। দুটি সভ্য দেশে গণমাধ্যম এটা মেনে চলে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, কিন্তু আজ আমার দেশের সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা দেখলে খুবই কষ্ট লাগে। আমাদের দেশের সংবাদ মাধ্যম ব্যক্তিগত হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করতে পিছপা হন না। আজ যদি সংবাদপত্র বা সংবাদ কর্মীদের পিছনে আদালত অবমাননার মামলা করে সময় নষ্ট করতে হয়, তবে লাখ লাখ মামলার বিচার কখন শেষ করব।
তিনি বলেন, প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। এই বিচার বিভাগের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা আইনজীবীদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা গরিব বিচার প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেবেন না।
ব্যারিস্টার শওকত আলী খান জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ-২০১৬ আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার।
ব্যারিস্টার রেহান হোসেন ও ব্যারিস্টার এম আশরাফুল ইসলাম'র উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন-বিশেষ অতিথি হিসেবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, জাতীয় সংসদের প্রাক্তন স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক ড. বশির আহমেদ, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম।